আজ ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কাজুবাদাম ও কফি চাষে বদলে যাবে পাহাড়ের কৃষি

Spread the love

রাঙামাটি প্রতিনিধি: পাহাড়ে পরিবেশ ধ্বংসকারি সেগুনের পরিবর্তে কপি ও কাজুবাদাম চাষকে লাভজনক বিবেচনা করে কপি ও কাজুবাদাম চাষকে প্রাধান্য দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের অধিভূক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ ও স্থানীয় কৃষি বিভাগকে পাহাড়ের কৃষকদেরকে কপি ও কাজুবাদাম চাষের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাহাড়ে কপি-কাজু বাদাম গাছ লাগানোর ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবং এই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

পার্বত্য উপদেষ্টা বলেন, কপি-কাজুবাদাম শুধুমাত্র এক বছরের জন্য নয়, এটি একবার শুরু করলে আগামী অন্তত ৪০/৫০ বছর লাগাতার অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিবে। এতে করে আমাদের প্রার্ন্তিক জনগোষ্ঠি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করবে।

জানা গেছে, দেশের ১৮০০ হেক্টর জমিতে ২০২১-এর জুন মাসে কপি-কাজু বাদাম চাষ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের শুরুতে কাজুবাদাম চাষ হতো। প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে প্রায় ৪২০০ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষ হচ্ছে। সেইসঙ্গে কফি চাষ ৬৫ হেক্টর থেকে বেড়ে ১৮০০ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। পাহাড়ে বর্তমানে উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলার ১২ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার কপি ও কাজুবাদামের বাগান সৃজন করা হয়েছে।

কৃষিবিদ মোঃ জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনাবাদি জমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ সম্প্রসারিত প্রকল্প কার্যক্রম পরিচালনা করছে উন্নয়ন বোর্ড। পার্বত্য অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফি চাষ সম্প্রসারণের ফলে আগে যেখানে জুম চাষ হতো সেখানে এখন কাজুবাদাম ও কফি চাষ হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে পার্বত্য এলাকার মানুষ কাজুবাদাম ও কফি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

কৃষিবিদ মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে কৃষি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেখানে কফি চাষ নতুন একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দেশে উৎপাদিত কাজুবাদাম ও কফির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। পাহাড়ে এই প্রকল্পের শুরু থেকেই এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলমান রয়েছে।

ইতোমধ্যে কাজুবাদামের ২২টি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। দেশে বর্তমানে কাজুবাদামের বাজার প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। প্রতি বছর গড়ে ২৫০০-৩০০০ টন প্রক্রিয়াজাতকৃত কাজুবাদাম আমদানি হয়। দেশে কফির চাহিদা প্রায় ২০০০ টন। গত এক দশকে গড়ে কফির চাহিদার প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫৬ শতাংশ। বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কফি দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি হয়। ভোক্তা পর্যায়ে গত ৫ বছরে এ দুটি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশের উৎপাদিত কফিও দেশের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় ব্যবহার হচ্ছে। প্রকল্পের প্রভাবে নতুন নতুন চাষি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট্যরা জানিয়েছেন, দূর্গম পাহাড়ে প্রায় ২ হাজার বাগান রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে মাত্র ৬ জন মাঠ সংগঠক। এসব মাঠ সংগঠকের নেই কোনো ডিপ্লোমা ডিগ্রি। যার ফলে চারা রোপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা সময়মতো সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়াও দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদেরকে সময়োপযোগি প্রশিক্ষণও দেওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে অর্থনৈতিক ব্যাপক সম্ভাবনাময় কপি-কাজুবাদাম চাষ এখনো পর্যন্ত পাহাড়ে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছেনা।

এদিকে রাঙামাটির কৃষি বিভাগ বলছে, সঠিক পরিকল্পনায় পাহাড়ি এলাকায় কপি ও কাজুবাদাম চাষ শুরু করা গেলে তা একদিকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবে, এবং অন্যদিকে পাহাড় রক্ষা পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর